নিজস্ব প্রতিবেদক : কোনো কিছুতে নিজেরা ছাড় দিয়ে সীমান্তে কিছু হবে না বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘কারণ বিএসএফের চাইতে বিজিবি কোনো অংশে কম নয়। সীমান্তে পিঠ দেখাবে না বিজিবি। বিজিবির পক্ষ থেকে আশ্বাস-নিশ্চিত করছি, সীমান্ত রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। নিয়ম-নীতির বাইরে আমরা বিএসএফ বা ভারতকে ছাড় দেবো না।’
সার্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘আমি সীমান্ত ও বিজিবির প্রেক্ষাপট থেকে বলতে পারি, সীমান্তে যারা মাইনরিটি আছেন তারা চলে যেতে পারেন- এ ধরনের অপপ্রচার অতিরঞ্জিত প্রচার করা হচ্ছিল। সে সময় বিএসএফ তাদের ক্যাম্পগুলোতে জনবল বাড়িয়েছে। তাদের অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের (ভারতের) সেনাবাহিনী আসার কথা নয়, কিন্তু সে সময়ে আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়ির মুভমেন্ট সে পর্যন্ত দেখেছি, যেখানে তাদের আসার কথা না।’
তিনি বলেন, ‘হয়তো তারা শঙ্কায় ছিল যে বড় সংখ্যক একটা অংশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায় কি না। আমরা এটার লিখিত ও মৌখিক প্রতিবাদ করেছি। পরবর্তী সময়ে ডিজি পর্যায়ে বিএসএফের সঙ্গে যে বৈঠক হবে সেখানে উত্থাপন করা হবে। তবে তারা (বিএসএফ) জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী সেখানে ছিল না। তবে তারা নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। তারা নানানভাবে এদিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করছে।’
আমাদের দেশের কিছু কিছু অপরাধী চক্র বিএসএফকে তথ্য দিচ্ছে দাবি করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা এমন কয়েকজনকে শনাক্ত করে এনটিএমসির মাধ্যমে পুলিশে সোপর্দ করেছি।’
বিজিবির আওতাধীন এলাকায় গতবারের তুলনায় এবার পূজা মণ্ডপের সংখ্যা কমেছে না বেড়েছে? জানতে চাইলে মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এবার এক অর্থে কমেছে। অন্য বছর সুনির্দিষ্ট স্থান ছাড়াও পূজা মণ্ডপ হতো। এবার সেটা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে। কারও অধিকার খর্ব করার জন্য নয়। যাতে করে যেখানে হচ্ছে সেখানে যেন ভালভাবেই পূজা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু বড় মন্দির ওপারে-এপারেও আছে। সেখানে যাতে ক্রস বর্ডার না হয় সেটা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে গতকাল থেকে মহালয়া শুরু হয়েছে। সুন্দর আমেজেই সেখানে পূজার আয়োজন হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন আমরা আর সীমান্তে পিঠ দেখানো না। এরমধ্যে বিজিবি কর্তৃক বিএসএফ সদস্যও আটক হয়েছেন। বিজিবি সার্বিকভাবে বিষয়টি কীভাবে নিচ্ছে- জানতে চাইলে মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিএসএফ সদস্য একজন কৃষককে ধাওয়া করে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ ক্ষেত্রে ওই বিএসএফ সদস্য ভুল স্বীকার করেন, তাহলেও কিছু নিয়ম-নীতি আছে। আটক ব্যক্তি কোনো ধরনের ক্ষতি করবে না বলে যদি জানান তাহলে বিওপি পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করে তাকে ফেরত দেওয়ার বিধান রয়েছে।’
সীমান্ত রক্ষায় বিজিবি বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসীমান্ত রক্ষায় বিজিবি বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী
তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছেন জানিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘কিছুদিন আগে কুলাউড়ায় স্বর্ণা দাস, ঠাকুরগাঁওয়ে জয়ন্ত মারা গিয়েছে সীমান্তে, যারা সাবালকই নয়। তাহলে তাদের হত্যা করতে হবে কেন? তারা তো নিরস্ত্রও ছিল। এ দুটি ঘটনার পরই ওই বিএসএফ সদস্য ঢুকে পড়লে আমরা আটক করি। আমরা বলেছি, বিওপি পর্যায়ের বৈঠকে আমরা ফেরত দেবো না। ব্যাটালিয়ন পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তাবেও আমরা বলেছি হবে না, সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক করে তাকে ফেরত দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ওই বিএসএফ সদস্য লিখিত দিয়েছেন তিনি বাকি জীবনে আর এ ধরনের কাজ করবেন না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পরদিন কিছু ভারতীয় পত্রিকায় লেখা হয় বাংলাদেশি কৃষক নিরস্ত্র অবস্থায় বিএসএফ সদস্যকে পেয়ে ধরে নিয়ে গেছে। সেটা নিয়ে আমাদের দেশে কোনো খবর হয়নি। আমরাই প্রতিবাদ পাঠিয়েছি তাদের পত্রিকায়।’
বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘আমরা সীমান্তে পিঠ দেখাবো না। আগে এ ধরনের ঘটনায় নানান ক্লিয়ারেন্স নিয়ে কাজ করা লাগতো। এখন আমি সরাসরি কাজ করতে পারছি। তবে অফিসিয়াল পেশাদার একটা সম্পর্ক বিএসএফের সঙ্গে রাখতে হবে। সেটা রক্ষয় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সীমান্ত নিরাপত্তার স্বার্থে। তবে কোনো কিছুতে কম্প্রোমাইজ করে নিজেরা ছাড় দিয়ে সীমান্তে কিছু হবে না। কারণ বিএসএফের চাইতে বিজিবি কোনো অংশে কম নয়।’
এনডিটিভিবিডি/০৩অক্টোবর/এএ