বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দশম আসরের শিরোপা জিতলো ফরচুন বরিশাল।
আজ টুর্নামেন্টের ফাইনালে বরিশাল ৬ উইকেটে হারিয়েছে চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। এই প্রথমবারের মত বিপিএলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় পড়লো তামিম-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর বরিশাল।
ফাইনালে বরিশালের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৪ রান করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দলের পক্ষে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন সর্বোচ্চ ৩৮ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল ১৪ বলে অপরাজিত ২৭ রান করেন। জবাবে ১ ওভার বাকী রেখে শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতে বরিশাল। দলের পক্ষে কাইল মায়ার্স ৪৬ ও অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৩৯ রান করেন।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে টস জিতে প্রথমে কুমিল্লাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানান বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ব্যাট হাতে নেমে পাওয়ার প্লেতে ৪৯ রান তুলতেই টপ-অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারায় কুমিল্লা।
প্রথম ওভারে বরিশালের পেসার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইল মায়ার্সের পঞ্চম ডেলিভারিতে তারই স্বদেশী ওবেড ম্যাককয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে ৫ রান করে সাজঘরে ফিরেন কুমিল্লার ওপেনার ক্যারিবীয়ান সুনীল নারাইন।
চতুর্থ ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে ১০ বলে ৩টি চারে ১৫ রান করা তাওহিদ হৃদয়কে বিদায় দেন ইংল্যান্ডের পেসার জেমস ফুলার। থার্ড ম্যানে হৃদয়ের দারুন ক্যাচ নেন মাহমুদুল্লাহ। দ্বিতীয় উইকেটে কুমিল্লার অধিনায়ক লিটন দাসের সাথে ১৫ বলে ২৪ রান যোগ করেন হৃদয়।
ষষ্ঠ ওভারে কুমিল্লা শিবিরে আবারও আঘাত হানেন ফুলার। থার্ড ম্যানে মাহমুদুল্লাহর ক্যাচে আউট হন ৩টি বাউন্ডারিতে ১২ বলে ১৬ রান করা লিটন।
এরপর কুমিল্লাকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জনসন চার্লস ও উইকেটরক্ষক মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। চতুর্থ উইকেটে ২৩ বলে ২৩ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন তারা। দশম ওভারে ১৫ রান করে ম্যাককয়ের প্রথম শিকার হন চার্লস।
ছয় নম্বরে নেমে ৩ রানে ইংল্যান্ডের মঈন আলি রান আউট হলে দরীয় ৭৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় কুমিল্লা। এ অবস্থায় ষষ্ঠ উইকেটে ২৯ বলে ৩৬ রানের জুটিতে কুমিল্লার রান ১শ পার করেন অঙ্কন ও জাকের আলি। বরিশালের পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বলে বোল্ড হবার আগে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৫ বলে ৩৮ রান করেন অঙ্কন।
১৭তম ওভারে দলীয় ১১৫ রানে অঙ্কনের বিদায়ে ক্রিজে এসে বরিশালের বোলারদের উপর চড়াও হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল। ফুলারের করা ১৯তম ওভারে ৩টি ছক্কায় কুমিল্লাকে ২১ রান এনে দেন রাসেল। অবশ্য সাইফুদ্দিনের করা শেষ ওভার থেকে ৭ রানের বেশি নিতে পারেননি রাসেল ও জাকের। তারপরও ৬ উইকেটে ১৫৪ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় কুমিল্লা।
৪টি ছক্কায় ১৪ বলে অপরাজিত ২৭ রান করেন রাসেল। ২টি চারে ২৩ বলে ২০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন জাকের। বরিশালের ফুলার ২টি, মায়ার্স-সাইফুদ্দিন ও ম্যাককয় ১টি করে উইকেট নেন।
১৫৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দারুন সূচনা করেন বরিশালের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ৫ ওভারে দলের রান হাফ-সেঞ্চুরিতে নিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৯ রান তুলেন তারা। এ সময় সমান ১টি ও ২টি ছক্কায় তামিম-মিরাজ ২৪ রান করে তুলেন।
কুমিল্লার স্পিনার মঈনের করা অষ্টম ওভারে টানা ১টি ছক্কা ও ২টি চার মারার পর বোল্ড হন তামিম। ৩টি করে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে ২৬ বলে ৩৯ রান করেন অধিনায়ক তামিম। মিরাজের সাথে ৪৮ বলে ৭৬ রানের জুটি গড়েন তিনি।
দশম ওভারে মঈনের দ্বিতীয় শিকার হন ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৬ বলে ২৯ রান করা মিরাজ।
৮২ রানের মধ্যে দুই ওপেনার বিদায়ের পর জুটি বাঁধেন মায়ার্স ও মুশফিকুর রহিম। মঈনের বলে ব্যক্তিগত ৮ ও ২০ রানে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান মায়ার্স।
জীবন পেয়ে কুমিল্লার বোলারদের উপর চড়াও হন তিনি। রাসেলের করা ১৫তম ওভার থেকে ২টি করে চার-ছক্কায় ২১ রান তুলেন মায়ার্স। হাফ-সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ১৭তম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে মঈনকে ক্যাচ দেন ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩০ বলে ৪৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া মায়ার্স।
মায়ার্সকে ফেরানোর ওভারেই মুশফিককে(১৩) থামান মুস্তাফিজ।
দলের জয় থেকে ১১ রান দূরে থাকতে আউট হন মুশফিক। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দলের বাকী প্রয়োজন মিটিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার। ১৯তম ওভারের শেষ বলে চার মেরে বরিশালের জয় নিশ্চিত করেন মিলার। মাহমুদুল্লাহ ৭ ও মিলার ৮ রানে অপরাজিত থাকেন। কুমিল্লার মুস্তাফিজ ও মঈন ২টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৫৪/৬, ২০ ওভার (অঙ্কন ৩৮, রাসেল ২৭*, ফুলার ২/৪৩)।
ফরচুন বরিশাল : ১৫৭/৪, ১৯ ওভার (মায়ার্স ৪৬, তামিম ৩৯, মঈন ২/২৮)।
ফল : ফরচুন বরিশাল ৬ উইকেটে জয়ী।