ঢাকা , রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

প্রতিবাদ ‘লালনের গান গাই’

মে ০৩, ২০২৪
বিনোদন
প্রতিবাদ ‘লালনের গান গাই’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মরমি সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের গানের দুটি চরণ লিখে স্টোরি দিয়েছিলেন এক যুবক। সেই সূত্রে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাঁকে। ঘটনাটি অসাম্প্রদায়িকতা তথা মানবতার জয়গানের জন্য সুপরিচিত লালনের ভক্তসহ সব মহলে উদ্বেগ জাগায়। লালনেরই বিখ্যাত সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে তারা জানাল এই ঘটনার সমস্বর প্রতিবাদ।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের প্রজন্ম চত্বরে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’-এর আয়োজনে ‘লালনের গান গাই’ শিরোনামে এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’ শীর্ষক যে গানের ‘সুন্নত দিলে হয় মুসলমান, নারীর তবে কী হয় বিধান’—এই চরণ দুটি লেখায় যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেই গান দিয়েই ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় এই কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে লালনের গান ও পদ পরিবেশনা, নাটক, বক্তৃতার মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লালন ফকিরের বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক প্রচারণাও চালাচ্ছে, যা প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মীদের ক্ষুব্ধ করেছে।

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে লালনের ‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে’, ‘সময় গেলে সাধন হবে না’, ‘জাত গেলো জাত গেলো বলে, আমারে কি রাখবেন গুরু চরণদাসী’, ‘মিলন হবে কত দিনে’সহ বিখ্যাত গানগুলো পরিবেশন করা হয়। কর্মসূচিতে গান পরিবেশন করেন লালন শিল্পী এলিজা পুতুল, মুসা করিম, বাংলাদেশ বাউল এবং লোকশিল্পী সংস্থার শিল্পী রিপন শেখ, গাজি ইমরান ও নয়ন সাধু। এ ছাড়া উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাতিঘর, সর্বনাম গান পরিবেশন করে।

‘একটি সাহসী ফুল দেখা যায়’ শিরোনামে একটি পথনাটক পরিবেশন করে থিয়েটার ৫২।

নাটকটির রচয়িতা ও নির্দেশক মিজানুর রহমান। নাটকটিতে বিভিন্ন সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ বিভিন্ন অভিযোগে লালনের অনুসারীসহ বাউলশিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন জনকে গ্রেপ্তার ও আটকের বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

 

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘গণজাগরণ মঞ্চ’র অন্যতম সংগঠক অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ লালন সাঁইজির একটি গানের দুটি চরণ ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন এক যুবক। ধর্ম অবমাননার কথা তুলে তাঁকে গ্রেপ্তার এবং তার পরবর্তী সময়ে নানা রকম প্রেক্ষাপট তৈরি করে সারা দেশে একটি তাণ্ডব পরিচালনা করার যে আয়োজন দেখতে পাচ্ছি, সেটি  নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর। আমরা বোধ হয় খুব বেশি দিন দূরে নেই, যেখানে এই বাংলাদেশকে দেখতে পাব বাঙালি সংস্কৃতিশূন্য, লালনশূন্য।

নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও প্রকাশক রবিন আহসান বলেন, ‘গ্রামের পর গ্রামে লালন অপদস্থ হচ্ছেন। আমরা আজ ঢাকায় প্রতিবাদ করছি, কিন্তু লালনকে লালনের সেই গ্রামে, লালন শিল্পীদের গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমরা যদি বাঙালি সংস্কৃতিকে বাঁচাতে চাই তাহলে লালনের যে গ্রাম, লালনের গানের যে গ্রাম সেই গ্রামের শিল্পীদের আমাদের বাঁচাতে হবে। সেই গ্রাম থেকেই তারা যেন গান গায়, সেই গান যেন আমরা এখানে বসে শুনতে পারি সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

এনডিটিভি/পিআর