এক অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। রাজনীতি আমাদের জীবনে এমনভাবে প্রবেশ করেছে, যেখানে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো পথ নেই। ঘরে ফিরে যাওয়া, নীরব হয়ে বসে থাকা—এগুলো সহজ বিকল্প মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই কি আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথ?
আজকের বাস্তবতা অত্যন্ত নির্মম। যে রাজনীতি একসময় আমাদের মুক্তির হাতিয়ার ছিল, তা এখন পরিণত হয়েছে আমাদের শৃঙ্খলায়। একটি দল, একটি সরকার আমাদের স্বপ্নগুলোকে দমিয়ে রেখেছে। আরেকদিকে, বিরোধী শক্তিগুলো মুখোশ পরে দাবি করছে যে তাদের হাতে ক্ষমতা দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু আমরা কি ভুলে গেছি অতীতের ভুলগুলো?
৯০ এর আন্দোলন এক সময় আমাদের আশা জাগিয়েছিল, কিন্তু তা হাইজ্যাক হয়েছিল ক্ষমতালিপ্সু গোষ্ঠীর হাতে। হাসিনার উত্থান তখন মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল, অথচ সেই আশা পরিণত হয়েছে বেদনায়। ১৫ বছর ধরে আমরা রাজনীতিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি। মনে করেছিলাম, নিরপেক্ষ থাকা মানে নিরাপদ থাকা। কিন্তু নিরপেক্ষতা কোনো আশ্রয় দিতে পারেনি। বরং আমাদের জীবনকে করে তুলেছে আরও দুর্বল, আরও নির্ভরশীল।
এই মুহূর্তে আমরা ক্লান্ত। আমরা ক্ষুব্ধ। তবে এই ক্লান্তি ও ক্ষোভ আমাদের জন্য একটি সুযোগ। যদি আমরা একত্রিত হয়ে এই শক্তিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে দেশটা আবার আমাদের হতে পারে। বিপ্লব কখনো ব্যর্থ হয় না। বিপ্লবকে টিকে থাকতে হয়, লড়াই করে যেতে হয়।
এ লড়াই শুধু একটি সরকারের বিরুদ্ধে নয়, এটি একটি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এমন একটি ব্যবস্থা, যা দেশের মালিকানা গুটিকয়েক মানুষের হাতে কুক্ষিগত করে রেখেছে। আমাদের সামনে দুইটি পথ: হয় ঘরে ফিরে যাবো, কিংবা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগোবো।
আমাদের অতীত আমাদের শিক্ষা দেয়। পিলখানার নৃশংসতা, বিশ্বজিতের মৃত্যু, আবরার ফাহাদের ত্যাগ—এগুলো শুধু ইতিহাস নয়, এগুলো আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। দেশটা আমাদের, কারো বাপের সম্পত্তি নয়।
আজ, যখন আমরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথা ভাবি, তখনই মনে রাখতে হবে, রাজনীতি আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। বরং লড়াই করতে হবে। একত্রিত হয়ে বলতে হবে, এই দেশ আমাদের। যে শহীদেরা তাদের রক্ত দিয়ে এই বিপ্লব আমাদের হাতে এনে দিয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের একমাত্র দায়িত্ব হলো এই বিপ্লবকে সামনে এগিয়ে নেওয়া।
লড়াই হবে। জয় আসবে। তবে শর্ত একটাই—পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।
মো: তানজিম হোসাইন
শিক্ষক ও সাংবাদিক