ঢাকা , শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

মাছের ট্রাকের আড়ালে মাদক পরিবহন করতো চক্রটি: র‌্যাব

জানুয়ারী ২৩, ২০২৪
অপরাধ
মাছের ট্রাকের আড়ালে মাদক পরিবহন করতো চক্রটি: র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদক চোরাকারবারি চক্রটি ১০০ কেজি গাঁজার  চালানটি নিয়ে তারা কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসার জন্য রওয়ানা করে। পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন তল্লাশি চৌকিতে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, কুমিল্লার চান্দিনা থেকে মাছ লোড করে যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে যাচ্ছে। পিকআপে মাছের ড্রামে গাঁজা লুকিয়ে রাখায় তারা নিশ্চিত ছিল যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশীতে ওই মাদকের সন্ধান পাওয়া যাবে না। সংস্থাটির দাবি, এই চক্রটি মাছের ট্রাকের করে মাদক পরিবহন করতো।
মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাব-৩ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

এরআগে সোমবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ দুইজন মাদক চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. মহসিন (৪০) এবং তার অন্যতম সহযোগী পিন্টু চন্দ্র সরকার (২৪)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০০ কেজি গাঁজা ও একটি পিকআপ উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল সোমবার দিবাগগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার মেঘনা নিউটাউন এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর একটি অস্থায়ী তল্লাশি চৌকি বসিয়ে অভিযান চালায়। অভিযানে পিকআপে করে পানির ট্যাংকিতে অভিনব কায়দায় লুকিয়ে মাদক পরিবহনের সময় ১০০ কেজি গাঁজা ও একটি পিকআপসহ মো. মহসিন ও পিন্টু চন্দ্র সরকার নামের দুই মাদক চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
সংস্থাটির দাবি, ওই মাদক চোরাকারবারি চক্রটি বিগত কয়েক বছর ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করতো। পরে ওই মাদকদ্রব্য রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহে মাদকের বড় বড় চালান নিয়ে এসে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতো।
সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা  গাঁজার চালানটি তারা রাজধানীতে সরবরাহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। তাদের পিকআপটিতে মাছ পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ড্রাম ছাড়া অন্য কোন মালামাল ছিল না। পথিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন তল্লাশি চৌকিতে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, কুমিল্লার চান্দিনা থেকে মাছ লোড করে যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে যাচ্ছে। পিকআপে মাছের ড্রামে গাঁজা লুকিয়ে রাখায় তারা নিশ্চিত ছিল যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশীতে ওই মাদকের সন্ধান পাওয়া যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, এই মাদক সিন্ডিকেটের মূলহোতা হলো মহসিন এবং তার অন্যতম সহযোগী পিন্টু। তাদের সাথে কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার আরও কয়েকজন মাদক কারবারী এই কাজের সাথে জড়িত। তারা অল্প পরিশ্রমে অধিক টাকা উপার্জনের লোভে মহসিনের পরিকল্পনা মোতাবেক মাদক সিন্ডিকেটটি গড়ে তোলে। মূলত গ্রেপ্তারকৃত মহসিনের পরিকল্পনায় তার অপরাপর সহযোগীরা বিভিন্ন সময় অবৈধ মাদকের চালান বহন ও বিক্রির কাজ করে আসছে। ওই চক্রটি মাদকদ্রব্য চোরাচালানের ক্ষেত্রে একেক সময় একেক ধরনের পন্থা অবলম্বন করত। তারা কখনও ভূয়া নাম পরিচয় ব্যবহার করে, কখনও মাইক্রোবাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে যাত্রী পরিবহনের নামে কিংবা যাত্রীবাহী বাসযোগে। আবার  পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে করে অবৈধ মাদকদ্রব্যের বড় চালান নিয়ে আসতো। পরবর্তীতে সেসব মাদকদ্রব্য তাদের সহযোগী অন্যান্য মাদক কারবারীদের মাধ্যমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ ও বিক্রি করতো।
র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মহসিন পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে পড়াশোনা না করে ছোটবেলা থেকে নিজ এলাকায় নছিমন গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। পরবর্তীতে সে পিকআপের হেলপারি শুরু করে। দীর্ঘ চার বছর পিকআপের হেলপারি করার পর সে নিজেই পিকআপ চালানো শুরু করে। এরপর থেকে সে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে পিকআপযোগে পণ্য পরিবহন করতো। ওই পেশার আড়ালে বেশি টাকা উপার্জনের লোভে সে মাদক কারবারের সাথে জড়িয়ে পড়ে। সে বিভিন্ন কৌশলে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধ মাদকদ্রব্য এনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট তৈরি করে। ওই সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী ঢাকায় ও এর আশেপাশের এলাকায় মাদকের বড় বড় চালান আনা নেয়া এবং ক্রয়-বিক্রির মাধ্যমে জমজমাটভাবে মাদকদ্রব্যের কারবার চালিয়ে আসছিল।
গ্রেপ্তারকৃত মহসিনের বিরুদ্ধে মাদক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার হাতিরঝিল থানা এলাকা থেকে মাদকসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় আরেকটি মাদক মামলা রয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিন মাস জেল খাটার পরে জামিনে বের হয়ে আবারও সে অবৈধ মাদকদ্রব্যের চোরাচালানের সাথে যুক্ত হয়।
গ্রেপ্তারকৃত পিন্টুর পেশা মূলত কাঠমিস্ত্রি। মাদক কারবারী মহসিন এবং পিন্টুর বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় মাদক সেবনের মাধ্যমে তাদের মাঝে সখ্যতা গড়ে উঠে। পরবর্তীতে মহসিন অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে পিন্টুকে তার মাদক ব্যবসার সহযোগী হতে প্ররোচিত করে। এরপর থেকে পিন্টু তার দৃশ্যমান কাজের পাশাপাশি গোপনে মহসিনের সাথে মাদকদ্রব্য পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রির প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে আসছে।
গ্রেপ্তারকৃত মো. মহসিন কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার কাশিমপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে আর পিন্টু চন্দ্র সরকার একই গ্রামের চন্দন চন্দ্র সরকারের ছেলে।
এনডিটিভিবিডি/২৩জানুয়ারি/এএ