মো: তানজিম হোসাইন
আমাদের সমাজে ক্ষমতার সামনে চুপ থাকার একধরনের অদ্ভুত সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। পরিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র থেকে রাজনীতি—প্রতিটি স্তরে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি নীরবতা পালন করতে। "বড়দের সামনে কথা বলা উচিত নয়," "উচ্চপদস্থের সিদ্ধান্ত মানতে হবে,"—এই আদর্শগুলো আমাদের চিন্তা ও প্রশ্নের স্বাধীনতাকে নীরবে খুন করেছে।
কিন্তু প্রশ্ন করতে ভয় কেন? কারণ, আমরা শিখেছি যে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা বিপদের কারণ হতে পারে। পরিবারে সন্তানকে সঠিক কথার জন্য দমন করা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়, আর কর্মক্ষেত্রে চাকরি হারানোর ভয়ে সত্য উচ্চারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এই সংস্কৃতির প্রতিফলন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আমাদের ভেতরে একধরনের জড়তা ও নির্লিপ্ততার বীজ বুনে দিচ্ছে। দুর্নীতি, অবিচার, এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রশ্ন না তুললে, তা আরও গভীরে শিকড় গেড়ে বসে। আর একবার দুর্ণীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলে, তা পুরো সমাজকেই ধ্বংস করে দেয়।
প্রত্যেক প্রজন্মের দায়িত্ব হলো এই চুপ থাকার সংস্কৃতি ভেঙে সাহসী প্রশ্ন করার চর্চা শুরু করা। ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার মধ্যে লুকিয়ে থাকে সৎ সাহস, সত্যের প্রতি আনুগত্য, এবং পরিবর্তনের ইচ্ছা।
ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা মানে কেবল সরকারের নীতি-নির্ধারণীকে নয়; বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে, পরিবার, কর্মক্ষেত্র, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করা। সাহসের সঙ্গে সত্যের প্রতি অঙ্গীকার ছাড়া কোনো সমাজেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
প্রথার পরিবর্তন এখন অত্যন্ত জরুরি। বহু পুরোনো প্রথা আরেকটি বড় বাধা, যা নতুন ভাবনার বিকাশকে রুদ্ধ করে রেখেছে। পরিবর্তন হয়তো সহজ নয়, কিন্তু এটি খারাপ নয়—বরং অত্যন্ত প্রয়োজন। সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে, ক্ষমতার সামনে নত না হয়ে, দুর্নীতি ও মিথ্যার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সত্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে সাহসী প্রজন্ম, যারা দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে নির্ভীকভাবে দাঁড়াতে পারবে। এই পরিবর্তনের ঢেউ জাতিকে আলোর পথে নিয়ে যাবে।