আশিক, ছোট্ট একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা স্বপ্নবাজ তরুণ। মায়ের চোখে তার জন্য অনেক আশা—প্রতিদিন স্কুলে, কলেজে গিয়ে পড়াশোনা করা এবং একদিন সরকারি চাকরির মাধ্যমে সংসারের দুঃখ মোচন করা। উচ্চশিক্ষা শেষ করে আশিক এখন বাড়িতে বসে, চাকরির জন্য অপেক্ষা করছে। এদিকে, বছর যাচ্ছে কিন্তু সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ মিলে না, তাই দিন দিন তার উদ্বেগ বাড়ছে।
আশিক একা নয়; এমন হাজারো তরুণ প্রতিদিন মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে ঘুমাতে যায়। শিক্ষার হার বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তাদের অধিকাংশই আজ বেকার। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখ লাখ গ্র্যাজুয়েট বের হয়, কিন্তু তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ এতটাই সীমিত যে অধিকাংশ তরুণ দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও চাকরির সুযোগ পায় না। শিক্ষা অর্জনের পরও অনেকে বাধ্য হয়ে কম বেতনের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজ করে জীবনযাপন করে, যা তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
শিক্ষাব্যবস্থার বড় সমস্যা হলো, এটি বেশি তাত্ত্বিক এবং কর্মমুখী নয়। তরুণদের শুধু সার্টিফিকেট দেয়ার উদ্দেশ্যে পাঠদান করা হচ্ছে, কিন্তু সেই শিক্ষা তাদের কর্মসংস্থানের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করতে পারছে না। আশিকের মতো তরুণরা চায় প্রতিষ্ঠিত কাজ, যেখানে বেতন এবং ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশে ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে এবং সেখানে তরুণদের যাওয়ার আগ্রহ কম।
বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা বৈদেশিক শ্রমবাজারেও প্রভাব ফেলছে। ফলে যারা দেশের বাইরে কাজ করতে চায়, তারাও আরেক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এ সংকট উত্তরণের জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা এবং বাস্তবমুখী কর্মসংস্থান ব্যবস্থা, যাতে আশিকদের মতো তরুণরা স্বপ্ন পূরণের পথে বাধাপ্রাপ্ত না হয়।
এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো তরুণ সমাজ, তাদের মেধা আর স্বপ্ন। সঠিক দিকনির্দেশনা আর প্রাসঙ্গিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে, দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টকে কাজে লাগানো সম্ভব। তাই প্রয়োজন শিক্ষা সংস্কারের, প্রয়োজন একটি কর্মমুখী ব্যবস্থা—যা তরুণদের সম্পদে পরিণত করবে এবং তাদের জন্য অপেক্ষার বদলে কর্মসংস্থানের একটি সম্ভাবনাময় পথ খুলে দেবে।
মো: তানজিম হোসাইন
শিক্ষক ও সাংবাদিক